বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

আকাশপথে ভ্রমণখরচ বাড়ছে 

  •    
  • ১৪ জুন, ২০২১ ০৮:৩০

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, দেশের তিন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অভ্যন্তরীণ রুটে প্রতি লিটার জেট ফুয়েলের দাম ৬৩ টাকা। আর আন্তর্জাতিক রুটের জন্য শূন্য দশমিক ৫৯ ডলার। এক ডলারের দাম ৮৫ টাকা ধরলে এ দাম দাঁড়ায় ৫০ টাকা ১৫ পয়সা।

এক বছর আগেও যদি আকাশপথে কেউ ঢাকা থেকে সৈয়দপুর যেতেন, তাহলে যেকোনো এয়ারলাইনসে খরচ হতো জনপ্রতি সর্বনিম্ন ২ হাজার ৭০০ টাকা। এই সময়ে কেউ যেতে চাইলে, তাকে গুনতে হবে সর্বনিম্ন ৩ হাজার ৪০০ টাকা। অর্থাৎ প্রায় এক বছরের মধ্যেই রুটটিতে খরচ বেড়েছে অন্তত ৭০০ টাকা। একই অবস্থা অন্য রুটগুলোতেও।

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) সম্প্রতি আরও একবার জেট ফুয়েলের দাম বৃদ্ধি করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, দেশের তিন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অভ্যন্তরীণ রুটে প্রতি লিটার জেট ফুয়েলের দাম ৬৩ টাকা। আর আন্তর্জাতিক রুটের জন্য শূন্য দশমিক ৫৯ ডলার। এক ডলারের দাম ৮৫ টাকা ধরলে এ দাম দাঁড়ায় ৫০ টাকা ১৫ পয়সা।

করোনার মধ্যে গত বছরের অক্টোবরে অভ্যন্তরীণ রুটে প্রতি লিটার জেট ফুয়েলের দাম ছিল ৪৬ টাকা। ডিসেম্বরে লিটার প্রতি দুই টাকা দাম বাড়িয়ে এটি করা হয় ৪৮ টাকা।

তার এক মাস পর আবারও বাড়ানো হয় দাম। সে সময় দাম হয় ৫৩ টাকা। এরপর ফেব্রুয়ারিতে ৫৫ টাকা, মার্চে ৬০ টাকা ও এপ্রিলে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৬১ টাকা।

অবশ্য মে মাসে জেট ফুয়েলের দাম এক টাকা কমিয়ে ৬০ টাকা নির্ধারণ করে বিপিসি। অর্থাৎ গত বছরের অক্টোবর থেকে এ বছরের জুন পর্যন্ত সাত মাসের ব্যবধানে জেট ফুয়েলের দাম বেড়েছে লিটারে ১৭ টাকা।

এয়ারলাইনসগুলো বলছে, একটি ফ্লাইট চালাতে যে পরিমাণ খরচ হয় তার ৪০ ভাগই নির্ভর করে জ্বালানির দামের ওপর। এভাবে প্রায় প্রতি মাসে জেট ফুয়েলের দাম বৃদ্ধি পাওয়াকেও ব্যবসার জন্য ভালোভাবে নিচ্ছেন না তারা।

জেট ফুয়েলের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব ভবিষ্যতে ফ্লাইটের টিকিটের দামের ওপর পড়বে বলেও জানান তারা।

বেসরকারি এয়ারলাইনসগুলোর সংগঠন অ্যাভিয়েশন অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশনের (এওবি) সেক্রেটারি জেনারেল মফিজুর রহমান বলেন, জেট ফুয়েল সরবরাহ করার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান পদ্মা অয়েল একচেটিয়া ব্যবসা করার কারণেই বারবার বাড়ছে দাম।ম

মফিজুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ফুয়েলের দাম আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে বাড়ে-কমে, এটা আলাদা জিনিস। কিন্তু আমাদের এখানে যেটা হচ্ছে, বিশ্বের অন্য জায়গায় কমে; আর আমাদের এখানে বেড়ে যায়। বিশ্ব বাজারের সাথে কোনো কো-অরডিনেশন নাই। আর্বিট্রালি কোনো কথাবার্তা নেই, কিছুদিন পরপর ফুয়েলের দাম বাড়ানো হয়। এটা হচ্ছে মনোপলির জন্য।

‘এভাবে ফুয়েলের দাম বাড়ানো এবং সেটা আমাদের ওপর চাপিয়ে দেয়া এটা পুরো ইন্ডাস্ট্রির জন্য ভালো নয়, ক্ষতিকর। ফুয়েল কস্ট ৪০ শতাংশ। তিন টাকা বাড়লে রাফলি প্রতি সিটে ৬০ থেকে ৭০ টাকা বেড়ে যায়।’

জেট ফুয়েলের বাড়তি দামের বোঝা শেষ পর্যন্ত যাত্রীদের কাঁধেই উঠবে বলেও জানান মফিজুর।

তিনি বলেন, ‘এখন আমাদের এয়ারলাইনসগুলোকে টিকে থাকতে গেলে তো বোঝা যাত্রীদের ওপরই দিতে হবে। এখন মানুষের ক্রয়ক্ষমতাও সীমিত। এতে দেখা যাবে ট্রাভেলটাও কমে যাবে।

‘এর ফলে ভাড়ার ওপর অবশ্যই প্রভাব পড়ে। ভাড়ার সাথে সমন্বয় না করলে তো আমাদের ভর্তুকি দিতে হবে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে আমরা কীভাবে-কোথা থেকে ভর্তুকি দেব?’

অবশ্য জেট ফুয়েল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান পদ্মা অয়েল বলছে, আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করেই মূল্য বৃদ্ধি করা হয়েছে।

প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুদুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘জেট ফুয়েলের দাম বাড়িয়েছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন। আর দাম কিন্তু বাড়ানো হয় আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করে।

‘এটা এমন নয় যে, শুধু বাংলাদেশেই বাড়ানো হয়েছে। আপনি কলকাতাতে দেখেন। আমরা কিন্তু কলকাতার চেয়েও দাম কম রাখি।’

অ্যাভিয়েশন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জেট ফুয়েলের মূল্যবৃদ্ধির অজুহাত হিসেবে কলকাতার উদাহরণ টানা অপ্রাসঙ্গিক। এভাবে বিবেচনাহীনভাবে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব পুরো অ্যাভিয়েশন খাতের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে ধারণা করছেন তারা।

অ্যাভিয়েশন বিশেষজ্ঞ এটিএম নজরুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এটা এয়ারলাইনসগুলোর জন্য মারাত্মক হুমকি। গত অক্টোবর থেকে জেট ফুয়েলের দাম প্রায় প্রতি মাসেই বেড়েছে। পৃথিবীর অন্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে জ্বালানির দাম কিন্তু অনেক বেশি। শুধু যদি কলকাতার উদাহরণ দেয়া হয়, সেটা কিন্তু ঠিক হবে না।

‘এর ফলে আকাশপথে ভ্রমণের খরচেও নিশ্চই প্রভাব পড়বে। অ্যাভিয়েশনের যে গ্রোথ, তাতে একটা প্রভাব পড়বে। আর এর যে ইফেক্ট, এটা এখনি বোঝা না গেলেও দুই থেকে তিন বছর পর এটা বোঝা যাবে।’

বেসরকারি এয়ারলাইনসগুলোর হিসাব বলছে, প্রতিবছর দেশের অভ্যন্তরে বিভিন্ন গন্তব্যে আকাশপথে ভ্রমণ করেন অন্তত ১৮ থেকে ২০ লাখ যাত্রী। প্রতিবছর যাত্রীসংখ্যা বাড়ছে ৭ শতাংশ হারে।

অবশ্য গত বছরের মার্চে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরুর পর নানা বিধিনিষেধের কারণে অভ্যন্তরীণ গন্তব্যে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে যাত্রী হারিয়েছে দেশি এয়ারলাইনসগুলো।

এ বিভাগের আরো খবর